সোমবার, এপ্রিল ০৬, ২০০৯

দূরে কোথাও - দুটি কৃষ্ণপক্ষের পাখী


তুমি কি আজ মিশে যেতে চাও
এই রাত্রির নিস্তব্ধতায়
যাবে কি, বলো যাবে কি
শুধু তোমার কথা ভেবে
কতদিন এমন একটি গান লিখতে চেয়েছি।

নির্জন- পুরো ফাঁকা একটা বাসে
চলো চলে যাই দুজনে
তোমাকে নিয়ে যাবো সেখানে
যেখানে কাঠের পুতুলের
মিছে মায়া ভালবাসা নেই।

আমি তোমার সাথে
সেখানে হেঁটে চলে যেতে চাই - সেই দূরে, বহুদূরে
সে দিনটি হয়ত মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে
ভ্যানগগের দি হারভেষ্টার বা গ্রিনকর্ন চিত্রকর্মের মত
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ দিয়ে হেঁটে যাব আমি
যেখানে হলুদ শস্যে মাঠ ভরে গেছে
তবুও কি তুমি আমার সাথে পথে পথ মেলাবে না।

চলো চলে যাই পাহাড়ের কোন চূড়ায়
যেখানে তোমাকে আমাকে সদ্য জন্ম নেয়া
দুটি কৃষ্ণপক্ষের পাখী বলে ভ্রম হবে
যা সবাই হয়ত অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রবে।

ওখানে আমরা হয়ত এতই নিশ্চিন্ত হয়ে যেতাম যে
সারাদিন একমাত্র বৃষ্টির শব্দেই আমাদের ঘুম ভাঙত
যেমন করে গহীন জঙ্গলের একমাত্র বাড়ীতে
অনেকদিন পর বরষার প্রথম বৃষ্টির
টুপটাপ শব্দ শোনা যায়
সারাটি জীবন এভাবেই যদি
স্বপ্ন আর কল্পনায় সত্যিই কেটে যেত
তবে কেমন হত!
রাশিদুল ইসলাম © ২০০৯



এক বরষার দিন



আজ সারাটা দিন কেমন যেন শীত-শীত,
প্রকৃতি বড় বিষাদাচ্ছন্ন
সারাদিন টুপটাপ বৃষ্টি, হাওয়া বইছে বেশ -
এখনও হয়নি পরিশ্রান্ত
আঙ্গুরের থোকাগুলো যদিও দুলছে,
তবু দেয়াল আঁকড়ে পড়ে থাকে যেন
কিন্তু বাতাসের দাপটে প্রতিবারই ঝরাপাতারা ঝরে যাচ্ছে
আর এই দিনটি বড় নিরানন্দ........

আমার জীবন যেন তেমনি আঁধারে ভারাক্রান্ত
মনে সারাদিন বৃষ্টি - হাওয়া বইছে বেশ - হয়নি শান্ত

মন আমার বারে বারে চলে যায়
আবছা মনের জানালায় -
দিগন্ত-বিস্তৃত অতীতে
কিন্তু তবু যৌবনের উচ্চাশা - মোটা দাগে
এত তান্ডবের পরও জেগে থাকে
আর এই দিনটি তো অবশ্যই কাটছে নিরানন্দ........

মন, তুমি শান্ত হও!!
আঁধারের কালো মেঘের ওপারে
জেনো আলো হাসছে
কারন তোমার নিয়তি যে আর সবার মত -
তা আজ জানতে পেরেছো বলে
সবার জীবনে কিছু বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিতেই হয়
সবার জীবনে কিছু কিছু দিন তো অবশ্যই
অন্ধকারাচছন্ন কাটাতে হয়।।
রাশিদুল ইসলাম © ২০০৯

মনে-আত্মায় বাঙালী


সবসময় মনে হয়
আমি নিস্পন্দ, নিথর ;
মাটিতে কান পাতি
কোন শব্দ নেই - পাথর ;
সমুদ্রের জলে চোখ রাখি
কোন রঙ নেই - গভীর ;
সূর্যে, প্রচন্ড জেদে, তাকিয়ে থাকি
তাকিয়েই থাকি, ভাবি অন্ধ হতে আর কতদূর ,
রাতে চাঁদ দেখি
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হইনা একবার ,
তথাকথিত সমাজ বিবর্তনে, অকারনে জেলেতে বন্দী থাকি
তবুও ভয় নাই কিছু হারাবার ,
নিজের খোলসকে ছিঁড়ে ছিন্ন-ভিন্ন করি
মনে অনুভূতি আসে না কোনবার ,
নিজের বিবেকের টুঁটি চেপে ধরি
বল্ কি পরিচয় আমার ?

মাঝে মাঝে ভুল করে ভাবি
আমি কি আসলে পৃথিবীর কাছে ঋৃণী ?
কারন,যখন দেখি অট্টালিকায় বসে
পৃথিবী যাদের সবাইকে বানিয়েছে - '' ধনী '' ,
তখন নিজেকে বড় ভাগ্যবান মনে হয়
ধন না থাকুক, মনে এবং আত্নায় আমি '' ধনী '' ,

আমি থাকি পাশেই ছোট্ট কুটিরে
নাম রেখেছি তার - '' ধানী '' ,
লতা জন্মিছে উঠানভরে
ছাদে জমেছে পানি ,
বরষার প্রথম বৃষ্টি পড়ে
উঠান ভরিছে আনি ,
প্রত্যূষে পাখিরা কলরব করে
মধুরকন্ঠী- নাম না তাদের জানি ,
সূর্য যখন জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে
তখন ভোরে বাতাসে শুরু হয় কানাকানি ,

আমি যে মনে-প্রানে বাঙালী
আজ আমি যে শুধু তাই জেনেছি

খোলস,মন আর আত্মা


তুমি কি শুধু আমার বাইরের
খোলসটারেই দেখলে?
এর ভিতরে যে একটা মন আছে
মনের ভিতরে যে একটা আত্মা আছে
জগতের ভুলে সেই মনরে তুমি দেখলে না
সেই আত্মারেও তুমি চিনলে না!

দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত খালি
আমার খোলসটাকে নিজের বানানোর লাগি
তোমরা চিহ্ন দিলে, তিলক আঁকলে
নাম রেখে একই গোয়ালের গরু বানালে!
দুনিয়ায় নানান মিথ্যা জটিলতা পাকালে!
‘তার’ সাথে অন্তরে অন্তর বাঁধালে
যারে জীবনেও দেখি নাই, চিনি নাই বা চাই নাই!
খোলসটা কেটে এক টুকরো নিয়ে বললে
এইটা নাকি আরেকটা 'আমি'!
সব্বাইকে বললাম "এই 'আমি' - আমি না!
ওর আত্মা - আমার আত্মা এক না!"
আত্মার ভেতরের কথা হলো এই "তোমরা আমার
জীবনটাকে শুধু শুধু জাহান্নাম বানালে,
দৌড়ের গাড়ী বানিয়ে চাবি মেরে ছেড়ে দিলে
একটা মূহূর্তও ভাবতে দিলে
না যে এই আমিটা কে,ভাবতে দিলে
না সেই 'উপরওয়ালা'র কথা!"

আজ তোমরা যে আবার আমারে
আরেক মাটির দোলনায় শুইয়েছো,জীবনের তরে
শেষবারের মত এই একটা কথা বরাবরই
বলতে চেয়েছিল মন তোমাদেরে
"আমার খোলসটা তোমাদের!
আমার মনটাও তোমাদের হাতের
খেলনা পুতুল মাত্তর!
কিন্তু আত্মাটা আমার
এবং এটাই শেষ সম্বল সবার!
চললাম!?"

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ১৫, ২০০৯

একটি দূর্নীতিবিরোধী মুক্তিযুদ্ধের অপেক্ষায়



মুক্তিযুদ্ধে যে সদ্যজাত বাঙালী শিশু
শত্রুপক্ষের প্ররোচনায়
বুদ্ধি, সত্তা ও জ্ঞান হারিয়েছিলো
হারিয়েছিলো তার আত্মার-আত্বীয় পরিবারের সকলকে
সে এখন জ্ঞান-বুদ্ধিতে বিশাল হয়েছে
সে এখন জানতে পেরেছে
যে আরেকটা দূর্নীতিবিরোধী মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন হয়েছে
এ সংগ্রাম আমাদের সত্তার সংগ্রাম
এটি আমাদের আত্মপরিশুদ্ধির সংগ্রাম।।

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৩, ২০০৯

প্রতিভার অবক্ষয়ের পাঁচালী



এ আঁধারে, অকূল-পাথারে
কেউ কি কারো নয়?
কেউ কেউ কেন তবে কারো
তরে পড়ে রয়?
সকলে কেন ভুল করে
বলে সব্বাই সমান নয়?
অবশ্য প্রতিভায় সমান সকলেরে
দেখি জন্মথেকেই!?

তারপরেতে শুরু হয়
প্রতিভার অবক্ষয়!
সেই হারানোর ক্ষয়
সারাজীবন মন অন্যের ঘাড়ে চাপায়!
অবশেষে একদিন মন কিছু না পাওয়ায়
ব্যথা বয়ে চলে যেতেই হয়!
জীবনটা এভাবেই না-পড়া বই
এর মত বৃথাই কেটে কুটে যায়
সময়ের সাধনাই যে প্রতিভার বাড়া বা বড়াই
কথাটি যেন সকলের মনে রয়
'সাধনই সকলের সত্য পরিচয়'
কথাটি জানিয়েই সমাপ্তির দিকে যাই!